নাটোরের নলডাঙ্গায় প্রশাসনের অবহেলায় বালু দস্যুরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মরা আত্রাই নদীর গভীর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক বালু উত্তোলন করছে।
মরা আত্রাই নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাসহ ৩ টি গ্রামের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।
ভুক্তভোগীরা বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও ফল পাচ্ছে না। তারা এ ব্যাপারে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবার কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ফকির পাড়া এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি, মসজিদ। উপজেলা খাজুরা ফকির পাড়া এলাকায় একই স্থানে গত ৩-৪ বছর ধরে ধরে বিট বালু উত্তোলন করছেন আত্রাই উপজেলার বড়ভিটার আহাদী নামের এক বালিদস্যু।
ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী রাজ্জাগ মাষ্টার, সালাম ফকির, কপিল উদ্দিন ও বেলাল হোসেন। ড্রেজার মেশিন দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গভীর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এছাড়া আত্রাই নদীর উপর ব্রীজের কাছে আরোও দুটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের প্রস্ততি নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। আর এতে হুমকির মুখে পড়েছে কোটি টাকার ব্যয়ে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ।পানির তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও মসজিদ।
৩-৪ বছর ধরে এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে নিষেধ করায় উল্টো এলাকাবাসীকে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন তারা বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে লাভবান হলেও এলাকার ফসলি জমি,রাস্তাঘাট, সেতু ও বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে।
ভুক্তভোগি বেলাল হোসেন বলেন, বালু দস্যুরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বাধা দেয়ার সাহস করে না। এরা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলন করছে। এতে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় আমার দুই বিঘা ফসলি জমি ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। পুরো এলাকায় শত শত বিঘা আবাদি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে।
এদিকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ভুক্তভোগীরা জানান, ড্রেজিং পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করা হলে ভরা বর্ষায় তাদের বসত ভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে।
জানা যায়, ২০১০ সালে বালু উত্তোলন নীতিমালায় যন্ত্রচালিত মেশিন দ্বারা ড্রেজিং পদ্ধতিতে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও সেতু, কালভার্ট, রেললাইনসহ মূল্যবান স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা বেআইনি। অথচ বালু দস্যুরা সরকারি ওই আইন অমান্য করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
ফকির পাড়ার ভুক্তভোগি মর্শিদা সরজান, সনেকা ও আব্দুর রশিদ, জানান, আমার বসতবাড়ি বালু উত্তোলন করায় বাড়ির আশে পাশে ভেঙ্গে ধসে পড়ছে।এ অবস্থায় আমরা পরিবার নিয়ে আতংকে আছি।অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিষেধ করায় আমাদের মারধরের হুমকি দিচ্ছে।বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য আমরা বেশ কয়েক বার বাধা দিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি।
বালু উত্তোলনকারী আহাদী ও সহযোগিতাকারী আব্দুর রাজ্জাগ মাষ্টার বলেন, এলাকাবাসীর স্বার্থে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই বালু দিয়ে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুলাহ আল মামুন বলেন, গ্রামবাসীর অভিযোগ পেয়েছি। খুব শিগগিরই উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।নদী থেকে বালু উত্তোলনে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি, বিষয়টি জানার পর ভুমি অফিসের তহশীলদার কে বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।